চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে বলেছেন, ইলিশের দাম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪



চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে বলেছেন, ইলিশের দাম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ সারা বছর জুড়ে সাধারণ জনগণের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাদ্যপণ্য। তবে, বিশেষ করে পূজার সময় এবং ইলিশ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ে বাজারে এর দাম অনেক বেড়ে যায়। জেলা প্রশাসকের এই বক্তব্য ইলিশের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বাজারে সিন্ডিকেটের সক্রিয়তাকে চিহ্নিত করে, যা বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ইলিশের বাজার ও সিন্ডিকেটের প্রভাব

বাংলাদেশে ইলিশের দাম বাড়া এবং বাজারের উপর সিন্ডিকেটের প্রভাবের বিষয়টি নতুন নয়। ইলিশের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্রগুলো যেমন চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ইত্যাদি এলাকায় একদল অসাধু ব্যবসায়ী এই মাছের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে। তারা কৃত্রিমভাবে ইলিশের সরবরাহ কমিয়ে দেয়, যার ফলে বাজারে ইলিশের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এসব সিন্ডিকেট কেবল ইলিশের দাম বৃদ্ধি করেই ক্ষান্ত থাকে না, বরং ইলিশ ধরা, সংরক্ষণ এবং বিক্রিতে বিভিন্ন অনিয়ম করে থাকে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য একটি বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের বক্তব্য

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, সিন্ডিকেট করে ইলিশের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইলিশের সরবরাহ নিয়ে কোনও প্রকৃত সংকট নেই, বরং বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। জেলা প্রশাসক এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং তিনি সাধারণ মানুষকে ইলিশের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সচেতন হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

ইলিশের মূল্যবৃদ্ধির কারণসমূহ

ইলিশের দাম বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটের পাশাপাশি আরও কিছু কারণও বিদ্যমান। যেমন:

১. মৌসুমী প্রভাব

ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ের কারণে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়, যার ফলে দাম বৃদ্ধি পায়। এসময় সিন্ডিকেট এই ঘাটতির সুযোগ নিয়ে দাম আরও বাড়িয়ে দেয়।

২. পরিবহন ও সংরক্ষণ সমস্যা

ইলিশ মাছ সংরক্ষণ এবং সঠিকভাবে পরিবহন করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে ইলিশ পৌঁছানোর সময় পরিবহন খরচ বাড়তে পারে, যার ফলে বাজারে এর দাম বেড়ে যায়।

৩. চাহিদার বৃদ্ধি

ইলিশের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। বিশেষ করে উৎসবের সময় ইলিশের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এই চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই সিন্ডিকেটগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়িয়ে দেয়।

সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ

ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতোমধ্যেই কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১. বাজার তদারকি

প্রশাসন বাজারে সরাসরি তদারকি করছে এবং ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। এছাড়া, সঠিক দাম নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন জেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

২. সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

চাঁদপুরসহ অন্যান্য জেলায় প্রশাসন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যারা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ইলিশের দাম বাড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, ইলিশের দামের উপর সিন্ডিকেটের প্রভাব কমাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

৩. বিকল্প বাজার ব্যবস্থাপনা

সরকারি উদ্যোগে ইলিশ সরাসরি কৃষক বা জেলেদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ন্যায্যমূল্যে বাজারে বিক্রির জন্য কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়বে এবং দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সমাধানের পথ

সিন্ডিকেটের কারণে ইলিশের দাম বাড়া একটি বড় সমস্যা, তবে এই সমস্যা সমাধানে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

১. সরাসরি বিক্রয় ব্যবস্থার উন্নয়ন

ইলিশের উৎপাদন এলাকা থেকে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে মাছ পৌঁছানোর জন্য একটি সরাসরি বিক্রয় ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এতে করে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমবে এবং ইলিশের দাম স্থিতিশীল থাকবে।

২. কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা বৃদ্ধি

ইলিশ মাছের সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করা প্রয়োজন। এতে করে ইলিশের সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা কমবে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৩. শক্তিশালী আইনি পদক্ষেপ

সিন্ডিকেটের কার্যক্রম বন্ধ করতে সরকারকে আরও শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে বাজারে ইলিশের দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।

উপসংহার

ইলিশের দাম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বৃদ্ধি করা দেশের একটি গুরুতর সমস্যা। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকসহ দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ এই সমস্যার বিরুদ্ধে সচেষ্ট রয়েছে। তবে, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ইলিশের মূল্যবৃদ্ধির এ সমস্যা সমাধানে বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন, আইনি পদক্ষেপ এবং জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি টেকসই সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

সূত্র: গ্লোবাল নিউজ এবং সংবাদ সংস্থা

Post a Comment

Previous Post Next Post